মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
الفتح الرباني لترتيب مسند الإمام أحمد بن حنبل الشيباني
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থার দিক-নির্দেশক হিসেবে পবিত্র কুরআনের পরই হাদীসের অবস্থান। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সুন্নতকে, তথা তাঁর বাণী, কাজ এবং অনুমোদনকে সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য আমাদের শ্রদ্ধেয় ইমামগণ প্রাণান্ত পরিশ্রম করে গেছেন, যার ফলশ্রুতিতে আজ আমরা গর্বের সাথে সহীহ হাদীসসমূহের বিশাল ভাণ্ডার বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছি।
হাদীসে রাসূল (সা) সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য যে শ্রদ্ধেয় ইমামগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) (মৃ. ৮৫৫ খ্রি.) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ২৮,০০০ থেকে ২৯,০০০ হাদীসের বিশাল সংগ্রহ তাঁর অমূল্য অবদান। 'মুসনাদে আহমদ' শীর্ষক তাঁর এ সংকলনকে 'হাদীসশাস্ত্রের বিশ্বকোষ' নামেও অভিহিত করা হয়। হাদীস সংকলনের ক্ষেত্রে তিনি বিষয় ভিত্তিতে বিন্যস্ত না করে বর্ণনাকারী তথা সাহাবায়ে কিরাম (রা)-এর নামানুসারে হাদীস সন্নিবেশ করেছেন। ফলে একই সাহাবী বর্ণিত বিভিন্ন বিষয়ক হাদীস সংশ্লিষ্ট সাহাবী (রা)-এর শিরোনামেই সংকলিত হয়েছে এবং এর বিপরীতে একই বিষয়ের হাদীস বিভিন্ন সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সংকলন করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আহমদ ইবনে আবদুর রাহমান ইবনে মুহাম্মদ আল-বান্না (র) এ মুসনাদকে অপরাপর সহীহ হাদীস সংকলনের ন্যায় বিষয়ভিত্তিক অধ্যায় ও পরিচ্ছেদে সুবিন্যস্ত করেন এবং এর নামকরণ করেন 'আল-ফাতহুর রাব্বানী লিতারতীবি মুসনাদিল ইমামি আহমদ ইবনে হাম্বল আশ-শায়বানী'। তবে হাদীস চর্চাকারীদের নিকট মুসনাদে আহমদের এ সংস্করণটি 'আল-ফাতহুর রাব্বানী' নামেই সমধিক পরিচিত।
ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল (র)
পুরা নাম: আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাম্বল (র)। তবে ইবনে হাম্বল (র) নামে তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ এবং তাঁর নামানুসারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাযহাব 'হাম্বলী মাযহাব' নামে পরিচিতি। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ আলিম, মুহাদ্দিস ও ফকীহ।
ইমাম হাম্বল (র)-এর পূর্বপুরুষ প্রথমদিকে বসরার অধিবাসী ছিলেন; কিন্তু তাঁর পিতামহ হাম্বল ইবনে হিলালের সাথে স্বীয় 'শায়বান' গোত্রের লোকেরা 'মারভ' শহরে চলে আসেন।
পিতামহ ছিলেন বনু উমায়্যার পক্ষ থেকে সারাখস-এর ওয়ালী এবং আব্বাসীদের প্রাথমিক সহযোগীদের অন্তর্ভুক্ত। আর পিতা মুহাম্মাদ ইবনে হাম্বল ছিলেন খুরাসানী সৈন্যবাহিনীর একজন সামরিক কর্মচারি। পিতা খুরাসান থেকে বাগদাদে বদলি হয়ে চলে আসার কয়েক মাস পরে রবিউস সানী ১৬৪ হি./ডিসেম্বর, ৭৮০ খ্রি. সালে ইমাম ইবনে হাম্বল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত এবং রাবী'আ গোত্রের শাখাগোত্র বানু শায়বানের অন্তর্ভুক্ত। ইরাক ও খুরাসান বিজয়ে এই শায়বান গোত্রের বিশেষ ভূমিকা ছিল। জন্মের তিন বছর পর তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। বাগদাদে তিনি আরবী ভাষা, সাহিত্য, ফিকহ ও হাদীস অধ্যয়ন করেন। হি. ১৭৯/খ্রি. ৭৫৫ সালে তিনি হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়নে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন এবং এতদুদ্দেশ্য ইরাক হিজায, ইয়ামন ও সিরিয়া সফর করেন। হি. ১৮৩ সালে তিনি কুফায় গমন করেন। তিনি সর্বপ্রথম ১৮৬ হি. এবং পরে ১৯০, ১৯৪ ও ২০০ হি. সালে বসরায় গিয়েছিলেন এবং অধিককাল সময় বসরায় অবস্থান করেন। বেশ কয়েকবার হজ্জ সম্পাদন করে তিনি কিছুদিন রাসূলে কারীম (সা)-এর রওযা মুবারকে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে সমসাময়িককালের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস ও ফিকহশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদগণের মধ্যে আবদুর রহমান ইবনে মাহদী, সুফয়ান ইবনে উয়ায়না, ওয়াকী ইবনুল-জাররাহ (র) প্রমুখ অন্যতম ছিলেন। ইমাম ইবনে তায়মিয়া (র)-এর বর্ণনামতে, ফিকহশাস্ত্রে ইবনে হাম্বলের শিক্ষাদীক্ষা মূলত হিজাযে অবস্থানেরই ফল। অনেক সময় তাঁকে ইমাম শাফিঈ (র)-এর শাগরিদ বলে মনে করা হয়। তবে অনেকের মতে এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা কেবল একবারই হি. ১৯৪ সালে বাগদাদে ইমাম শাফিঈ (র)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল এবং তিনি ইমাম শাফিঈ (র)-এর ফিকহী শিক্ষা সম্পর্কে খুব কমই অবহিত ছিলেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি একটি ছোট জায়গীর লাভ করেছিলেন। তদ্বারা তিনি অত্যন্ত অনাড়ম্বর ও স্বাধীন জীবন যাপন করতে থাকেন। খলীফা আল-মামুনের শাসনামলের শেষদিকে মুতাযিলা মতবাদে বিশ্বাস রাষ্ট্রানুগত্যের পর্যায়ে উন্নীত হলে ইবনে হাম্বল (র)-এর উপর নির্যাতনের সূচনা হয়, ফলে পরবর্তীকালে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কুরআন আল্লাহর সৃষ্ট বাণী বলে মুতাযিলীগণ যে মতবাদ পোষণ করে থাকে, ইমাম ইবনে হাম্বল (র) দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করেন। কেননা এই বিশ্বাস আহলে-সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতবাদ কুরআন আল্লাহর চিরন্তন বাণী-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থি। নতুন খলীফা আল-মুতাসিমের সময়ে তাঁর উপর নানা প্রকার দৈহিক শান্তি প্রয়োগ করা হয়; অতঃপর দুই বৎসর কারারুদ্ধ থাকার পর তাঁকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়। আল-মুতাসিমের সমগ্র খিলাফতকালে তিনি নিজ গৃহে অবস্থান করেন এবং এ সময় হাদীস শিক্ষাদানেও বিরত থাকেন।
হি. ২৩২/খ্রি. ৮৪৭ সালে আল-মুতাওয়াক্কিলের খিলাফত লাভের পর সরকারিভাবে পুনরায় সুন্নী মত অনুসরণ করা হলে তিনি অধ্যাপনার কাজ পুনরায় শুরু করেন। পূর্ববর্তী খলীফাদের আমলের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ দরবার থেকে অপসারিত হলে স্বাধীন মতের উলামা ও খলীফার মধ্যে যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত হয়। অতঃপর খলীফা ও ইবনে হাম্বলের মধ্যেও সম্পর্কের দ্বার উন্মোচিত হয়। হি. ২৩৭/খ্রি. ৮৫২ সালে খলীফা তাঁকে সামাররা ডেকে পাঠান। সামাররার এই সফরে ইবনে হাম্বল (র) দরবারের পারিষদবর্গের সঙ্গে স্বাধীনভাবে সাক্ষাতের সুযোগ লাভ করেন। সামাররায় উপস্থিত হলে প্রাসাদের হাজিব (রক্ষীদলের প্রধান) ওয়াসিফ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন এবং অত্যন্ত সম্মানের সাথে সুসজ্জিত ঈতাখ প্রাসাদে তাঁর অবস্থানের সুব্যবস্থা করেন। তাঁকে বহু উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা হয় এবং পরে তাঁকে শাহযাদা আল-মু'তাযয-এর নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থা, বয়সের কারণে এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর তিনি বাগদাদে ফিরে আসেন। খলীফা তাঁর অজ্ঞাতে তাঁর পরিবারকে একটি বৃত্তিও প্রদান করেছিলেন।
অতঃপর ৭৫ বছর বয়সে ইমাম ইবনে হাম্বল (র) রবিউল আউয়াল ২৪১ হি./ জুলাই ৮৫৫ খ্রি. সালে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। বাগদাদের হারবিয়্যা অঞ্চলে শহীদদের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তবে তাঁর দাফন সম্পর্কে অনেক অতিরঞ্জিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এ বিষয় স্পষ্ট যে, জনসাধারণের মনে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল। যার ফলে তাঁর মাযারে ভক্তবৃন্দের এমন বিপুল সমাগম হতে থাকে যাতে স্থানীয় প্রশাসন মাযারটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়। হি. ৫৭৪/খ্রি. ১১৭৮-৭৯ সালে খলীফা আল-মুসতাদী তাঁর মাযারে একটি উৎকীর্ণ ফলক স্থাপন করেন। যাতে সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে মুহাদ্দিস ইবনে হাম্বল (র)-এর অনেক প্রশংসা করা হয়েছে। তবে হি. ৮০০/ খ্রি. ১৪শ শতকে তাইগ্রিস নদীর এক প্লাবনে তাঁর কবরটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
সালিহ ও আবদুল্লাহ নামে তাঁর দু'জন পুত্র সন্তান ছিল। সালিহ হি. ২০৩/ খ্রি. ৮১৮-১৯ সালে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসফাহানের কাযী ছিলেন। ইবনে হাম্বল (র)-এর ফিকহী মতবাদের অধিকাংশই তাঁর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ হি. ২৯০/ খ্রি. ৯০৩ সালে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। ইবনে হাম্বল (র)-এর মাযারটি টাইগ্রিস নদীর প্লাবনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর সর্বসাধারণের ভক্তি-শ্রদ্ধা আবদুল্লাহর কবরের দিকে ধাবিত হয় এবং তখন থেকে পুত্রের কবর ভুলবশত পিতার কবররূপে শ্রদ্ধালাভ করতে থাকে। তাঁর উভয় পুত্রই পিতার জ্ঞান সাধনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত ছিলেন।
ইমাম ইবনে হাম্বল (র)-এর প্রসিদ্ধ রচনাবলীর মধ্যে তৎপ্রণীত হাদীস সংকলন মুসনাদ বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। এর প্রথম সংস্করণ কায়রো ১৩১১ হি.-১৩১৩ হি., আহমদ শাকির কৃত নতুন সংস্করণটি ১৩৬৮/১৯৪৮ সাল থেকে প্রচলিত রয়েছে। ইবনে হাম্বল (র)-এর হাদীস সংকলনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে তদীয় পুত্র আবদুল্লাহ গ্রন্থটির বহু বিষয়বস্তু সংগ্রহ করেন এবং তা সুবিন্যস্তসহ এতে কিছু সংযোজন করেন। এ সংকলনটিতে হাদীসসমূহকে বুখারী ও মুসলিম শরীফের ন্যায় বিষয়ের ভিত্তিতে বিন্যাস করা হয় নি; বরং বর্ণনাকারীগণের নামের ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে। যেমন হযরত আবু বকর (রা), হযরত উমর (রা), হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা) প্রমুখ উল্লেযোগ্য সাহাবীদের বর্ণিত হাদীস ও আনসারদের বর্ণিত হাদীস সংকলন করা হয়েছে। সর্বশেষে মক্কা, মদীনা ও সিরিয়াবাসীদের বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। আবদুল মান্নান উমার ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রীয় বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে মুসনাদকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সজ্জিত করেছেন। ফলে মুসনাদটি বুখারী ও মুসলিম শরীফের ন্যায় বিষয়ভিত্তিকরূপ লাভ করেছে। পাণ্ডুলিপিটি সংকলকের নিকট সংরক্ষিত আছে। মুসনাদ গ্রন্থে সর্বমোট ২৮,০০০ থেকে ২৯,০০০ হাদীস স্থান পেয়েছে। মুসনাদকে কেন্দ্র করে অনেক সংযোজন গ্রন্থ এবং এতে সন্নিবেশিত হাদীসসমূহের পূর্ণ বিন্যাসমূলক বিস্তর সাহিত্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বাদশ/অষ্টাদশ শতাব্দী হতে একটি ধর্মনিষ্ঠ সংসদ মদীনায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর রওযা মুবারকের পাশে বসে ক্রমাগত ৫৬টি অধিবেশনে এই পুস্তকখানা আদ্যোপান্ত পাঠ করেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়।
হাদীস শাস্ত্রের বিচার-বিবেচনায় আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-কে একজন মুজতাহিদ হিসেবে গণ্য করা যায়। কেননা তিনি আইনের উদ্ভব অপেক্ষা হাদীসের উৎস সন্ধানে সমধিক আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আর এ জন্যই তাবারী প্রমুখ ফিকহশাস্ত্রের কয়েকজন খ্যাতনামা আলিম তাঁকে ফকীহরূপে স্বীকৃতি দেন না, তাদের মতে তিনি একজন মুহাদ্দিসমাত্র, ইমাম হাম্বলের (র) মাযহাবের মূলনীতি ও আকাইদ বুঝতে হলে তার রচিত দুটি মৌলিক পুস্তিকা আর-রাদ্দু আলাল-জাহমিয়্যা ওয়ায-যানাদিকা' এবং 'কিতাবুস সুন্নাহ' বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর ফাতওয়াসমূহকে লিপিবদ্ধ করা এবং ফিকহী বিষয়সমূহকে বিষয়ভিত্তিতে সুবিন্যস্ত করার দায়িত্ব তাঁর দুই পুত্র পালন করেন। এতে কুরআন ও সুন্নাহর পর সাহাবীগণের ফাতওয়াকে তৃতীয় সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মাযহাবী আকীদার উক্ত সূত্রটির বৈধতার কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি ইসতিসহাব (যোগসূত্রের সন্ধান)-এর বহুল প্রয়োগ করেছেন। যা যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শরীআতের বিধান নির্ধারণের একটি প্রত্রিয়া। সর্বসাধারণের কল্যাণ (মুসলিহাত)-এর দিকে লক্ষ্য রেখে জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে ফিকহী বিধানের হাম্বলী মাযহাবের নীতি অনুযায়ী সংকোচন অথবা প্রসার সাধন করা হয়। নৈতিকতার প্রাধান্য ছিল তাঁর ব্যক্তি-কর্মবহুল জীবনে। তাঁর মতে, সকল কাজের প্রধান লক্ষ্য আল্লাহর ইবাদত। জাহমিয়্যা ও মুরযিয়্যাদের বিরুদ্ধে তাঁর দাবি এই ছিল যে, ঈমান অর্থ "কথা, কাজ, নিয়্যাত ও সুন্নাতের অনুসরণ।" মুসলিম জগতে তুর্কী প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুসলিম জাহানের কেন্দ্রসমূহে সরকার অনুমোদিত পন্থায় নিয়োজিত কাযীগণ হাম্বলীসহ চার মাযহাবের প্রতিনিধিত্ব করতেন। তুর্কীদের প্রাধান্যের ফলে হাম্বলী মাযহাবের প্রভাব হ্রাস পায়। তবে অদ্যাবধি চারটি সুন্নী মাযহাবের মধ্যে হাম্বলী মাযহাব অন্যতমরূপে গণ্য।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের রাজনৈতিক মতাদর্শ মূলত খারিজী, শী'আ এবং রাফিযীদের পরিপন্থি। তাঁর মতে একমাত্র কুরায়শগণই খিলাফাতের বৈধ দাবিদার। তাঁর সমসাময়িককাল যে 'শুউবিয়্যা আন্দোলন' অর্থাৎ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক যে তীব্র বিবাদ শুরু হয়েছিল, ইবনে হাম্বল এতে আরবদের সমর্থন দান করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনও নিজের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করেন নি। জাতির ঐক্য বিনষ্টকারী পারস্পরিক সকল বিবাদ-বিসম্বাদকে এড়িয়ে বৃহত্তর সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান।
সর্বশেষে ব্যক্তি ইবনে হাম্বল (র) ও তাঁর ঘটনাবহুল জীবন চরিত সঠিকভাবে উপলব্ধি ও বিচার-বিশ্লেষণ করতে হলে নানাবিধ বিষয়ে তাঁর অসামান্য রচনাবলীর যথার্থ অধ্যয়ন ও গভীর মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে।